করোনা সচেতনতা: কোয়ারেন্টাইন বনাম আইসোলেশন
করোনা ভাইরাস বা COVID - 19 এর সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই আমাদের সবচেয়ে বেশি শোনা শব্দ দুটো হলো কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশন। এই কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশন কী? কী প্রয়োজন এসবের? যাহাই কোয়ারেন্টাইন তাহাই কি আইসোলেশন? কী তফাত এদের মধ্যে? কেন থাকতে হয় কোয়ারেন্টাইনে বা আইসোলেশনে? কোনটা কখন কাদের জন্যে প্রয়োজন? এই প্রক্রিয়ার স্থায়িত্বই বা কতদিন? কোয়ারেন্টাইন আর আইসোলেশনে থাকার সময় করণীয় কী কী?
এই পরিচিত প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই কথা বলবো আজ -
যেসব ব্যক্তিকে বাহ্যিকভাবে দেখে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু তিনি সুস্থ হতে পারেন, আবার নাও পারেন, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে অথচ তার মধ্যে কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি- এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়।
করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নামক বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে। কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়। আর কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে।
কোয়ারেন্টাইন কাদের জন্যে প্রয়োজন?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এখন সবাইকেই কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত দেশের বাইরে থেকে (করোনার সংক্রমণ আছে যেখানে) আগতদের জন্যে কমপক্ষে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক। কারণ এই রোগটিকে ইতিমধ্যে সারাবিশ্বে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই রোগের প্রতিকার নেই বলেই প্রতিরোধ এত জরুরি।
কোয়ারেন্টাইন কেন প্রয়োজন? কোয়ারেন্টাইন মানেই কি গৃহবন্দী জীবনযাপন?
অনেকেই কোয়ারেন্টাইনকে বাসায় বন্দি থাকার সাথে গুলিয়ে ফেলে আতঙ্কিত হচ্ছেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে কোয়ারেন্টাইন অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। তবে কোয়ারেন্টাইন মানে এই নয় যে, কাউকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কিছুদিন আলাদা থাকতে বলা হয়। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর থেকে রোগের পূর্ণ প্রকাশ হতে ১৪ দিন সময় লাগে। সে জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন করতে বলা হয়েছে ১৪ দিনের জন্য। হোম কোয়ারেন্টাইন মানে আপনি থাকবেন নিজের বাড়িতে। এতে যদি উপসর্গ প্রকাশ পায় তাহলে যতদ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে হবে। আর উপসর্গ প্রকাশ না পেলে সে ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা যাবে।
কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন যে সতর্কতাগুলো অবশ্য পালনীয় -
- সম্ভব হলে আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন।
- নিজের জন্যে আলাদা তোয়ালে, গামছা, ব্যবহার করুন। নিজের বিছানা আলাদা রাখুন।
- যথাসম্ভব মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
- প্রতি ঘণ্টায় একবার সাবান, স্যানিটাইজার বা হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন। (বিশেষ করে প্রতিবার হাঁচি-কাশি দেবার পর)
- অযথা নাক আর চোখে খোঁচাখুঁচি করা যাবে না। একান্তই করতে হলে হাত পরিষ্কার করে নিন।
- যেসব জায়গায় বারবার স্পর্শ করার সম্ভাবনা আছে, সেগুলো দিনশেষে ভালো করে জীবাণুনাশক দিয়ে মুছে ফেলুন। যেমন দরজার হাতল, কম্পিউটার, ফোন, টয়লেট ইত্যাদি। (টাকা-পয়সা হাতে নেওয়ার পরও হাত পরিষ্কার করুন।)
- হাঁচি - কাশি দেবার সময় অবশ্যই মুখ ঢেকে নিন। এক্ষেত্রে হাতের তালুর বদলে কনুইয়ের সাহায্য নিন।
আইসোলেশন কী? আইসোলেশন কাদের জন্যে? আইসোলেশন কতদিন স্থায়ী? কাদের জন্যে আইসোলেশন প্রয়োজন?
কারো মধ্যে যখন জীবাণুর উপস্থিতি ধরা পড়ে বা ধরা না পড়লেও তার মধ্যে উপসর্গ থাকে তখন তাকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই হলো আইসোলেশন। বিশেষ এই পদ্ধতিতে রোগী স্বয়ং এবং রোগীর ব্যবহৃত কোনো কিছু যাতে কারও সংস্পর্শে না আসে সেটা সুনিশ্চিত করাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
আইসোলেশনে কতদিন রাখা হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই। পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত আইসোলেশনে রাখা হয়। আইসোলেশনে সাধারণত রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সদের নিবিড় পযবেক্ষণে থাকতে হয়। আইসোলেশনে থাকাকালীন কারও সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই।
সংক্ষেপে বলতে গেলে বলা যায়, আইসোলেশন হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য অর্থাৎ যাদের মধ্যে এরই মধ্যে সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গেছে তাদের জন্যে অন্যদিকে কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে সুস্থ বা আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য।
এই সময়টায় কী কাজে লাগানো যেতে পারে -
- করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সতর্ক হন।
- খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাসা থেকে বের না হওয়াই ভালো। যদি বের হতেও হয় তাহলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে এরপর বের হন।
- নতুন কোনো স্কিল শিখুন। ইউটিউব ও অন্যান্য সাইটে বিভিন্ন বিষয় শেখার জন্য প্রচুর টিউটোরিয়াল আছে। এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টের মতো সফটওয়্যার শিখে ফেলতে পারেন।
- Ted Talk শুনতে পারেন। আপনার প্রিয় বিষয়ের নাম লিখে তারপরে Ted Talk লিখে সার্চ দিলে ভালো বিষয় পেয়ে যেতে পারেন।
- নিজের ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন।
- আমাদের অনেকের আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ হয় না ব্যস্ততার কারণে। এই সময়টাতে চাইলে তাদের সঙ্গেও ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
সর্বোপরি আমাদের সকলেরই উচিৎ এই মহামারি থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন সঠিকভাবে মেনে চলা।